আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাস খুব বেশি লম্বা নয়। ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি জয়ে বিশ্বকাপে এক প্রতিযোগির নাম বাংলাদেশ। এর বছর তিনেক পর টেস্ট মর্যাদাও বাংলাদেশের ঝুলিতে। সেই থেকে পথচলা শুরু। এক পা দু পা করে অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেট। আর এই বছরটা রীতিমতো ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতোই।
বাংলাদেশ এখন আর উপহাসের পাত্র নয়। বুক চিতিয়ে লড়ে বিজয় কেতন ওড়ানো বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন নিয়মিত দৃশ্য। ক্রিকেটের চারণভূমি বললে হয়তো বাড়াবাড়ি হবে। কিন্তু ১৬ কোটি মানুষের ক্রিকেট পাগল এক জাতির প্রাণের খেলার নাম এখন ক্রিকেট। প্রিয় দলও ছুটে ছলেছে দুর্বার গতিতে। তাই তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলে (আইসিসি) বাংলাদেশের ক্রিকেটকে উপস্থাপন করা হচ্ছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে নিয়মিত দৃশ্য হয়তো সবার কাছে খুব বেশি সুখকর নয়। চারপাশে অনেক হা-হুতাশ, অভিযোগ, আক্ষেপ বা অনিয়মে ভরা। ঘরোয়া ক্রিকেটের সাফল্যে নেই স্বস্তির ছাপ। যতটা পথ পাড়ি দেয়ার কথা ছিল ততটা মেলেনি বলে আছে হতাশাও। সঙ্গে আছে সাফল্যের ছোঁয়াও। কিন্তু এসব নিয়মিত দৃশ্য এদেশের মানুষের কাছে স্বাভাবিকই। তবে এই স্বাভাবিক ব্যাপারই যদি কারো কাছে হয়ে ওঠে গবেষণার বিষয়, তাহলে কেমন হবে?
তেমনই হচ্ছে। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নিয়ে গবেষনা শুরু করতে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। আর সেই গবেষণার নেতৃত্বে আছেন আইসিসির ডেভলপমেন্ট অফিসার হিসেবে নিয়োজিত বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ও প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
ধাপে ধাপেই এগিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। বিশেষ করে গত বছরের শেষ দিক থেকে অপ্রতিরোধ্য এক দলের নাম বাংলাদেশ। টানা পাঁচটি ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। শিকারে পরিণত হয়েছে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ক্রিকেট পরাশক্তিরা। এবার তাই বাংলাদেশকে রোল মডেল বানিয়ে সহযোগি দেশগুলোর সামনে তুলে ধরবে আইসিসি।
এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের কিছু দেশকে দেয়া হবে সেই গবেষণা পত্র। যা দেখে নিজেদের ক্রিকেটকে আরও সুসংহত করার সুযোগ পাবে তারা। গবেষণার জন্য আইসিসি দায়িত্ব দিয়েছে মেলবোর্নের নামকরা বিশ^বিদ্যালয় ডেকেইন ইউনিভার্সিটির গ্রিন অ্যাসোসিয়েট পরিচালক ও স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ শিলা এন এনগুয়েনকে। ঢাকায় এসে বাংলাদেশের ক্রিকেটের আদি-অন্ত খতিয়ে দেখবেন এই গবেষক। আর গোটা কার্যক্রম পরিচালনায় থাকবেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
আগামী ১২ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই গবেষণা। এ বিষয়ে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী বলছেন, ‘এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য গর্বের ব্যাপার নয়, দারুণ অনুপ্রেরণার ব্যাপারও। আমাদের বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ক্রিকেট কিভাবে উন্নতিটা করছে সেটা তারা বিশ্লেষন করে দেখতে চান। আমাদের উন্নতিটা যে দৃষ্টি কেড়েছে, এটা অবশ্যই আমাদের জন্য অনেক বড় একটা গর্বের ব্যাপার। পাশাপাশি এতে আমরা অনুপ্রাণিতও বটে। আমরা মনে করি, আমাদের আরও ভালো কাজ করায় এই ব্যাপারটি অনুপ্রেরণা জোগাবে।’
আইসিসির কর্মকর্তা বুলবুল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার অফিসেই কাজ করেন। বিষয়টি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আইসিসি খেয়াল করেছে যে, বার্বাডোজের মতো কিছু দেশে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা কমছে। আবার অনেক চেষ্টার পরও নেপাল বা পাপুয়া নিউগিনির মতো কিছু দেশে জনপ্রিয়তা বাড়ছে না। অনেক দেশ আবার অনেক চেষ্টা করেও সাফল্য পাচ্ছে না। এই জায়গাগুলোতে তারা একটা মডেল খোঁজ করছিলো, যে মডেলটা বিভিন্ন দেশে প্রয়োগ করা যাবে। এখন দ্রুত উন্নতি করায় বাংলাদেশ যে সেরা মডেল, আমাকে স্রেফ এটা বোঝাতে হয়েছে।’
বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নের এই মডেলকেই বিভিন্ন দেশে প্রয়োগ করতে চায়া আইসিসি। এ জন্য বাংলাদেশে চার দিনের এই সফরে দেশের ক্রিকেটার, ক্লাব কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বোর্ড পরিচালক বা প্রধান নির্বাহীর সাথে আলাপ করতে চান শিলা। গবেষণার ধরণ বিষয়ে বুলবুল বলেন, ‘তিনি মূলত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ও সাক্ষাৎকার থেকে পরিবর্তনটা বোঝার চেষ্টা করবেন। আমাদের এখানে ক্লাব ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা একটা বড় ব্যাপার। সেটা নিয়ে কাজ করবেন। কিভাবে ক্রিকেটাররা উঠে আসছে, দেখতে চাইবেন।’