দেখতে দেখতে দীর্ঘ চুয়াল্লিশ বছর পেরিয়ে গেল। আমরা পাকিস্তানী নব্য-ঔপনিবেশিক শাসক ও শোষকদের করাল গ্রাস হতে মুক্ত হয়ে দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি। ত্রিশ লক্ষ শহীদেও রক্তের সাগর পাড়ি দিয়ে দীর্ঘ নয় মাস ধরে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধেও মাঝ দিয়ে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। বিজয় দিবস পালনের স্বর্ণালী মুহুর্তে আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির দূরত্বটুকু মাপতে হচ্ছে।
রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক সুবিচার এবং সাংস্কৃতিক আত্ম-বিকাশের প্রত্যয় নিয়ে স্বাধীনতার স্বাপ্রিক পুরুষরা যে স্বাধীন বাংলাদেশের ছক এঁকেছিলেন, চুয়াল্লিশ বছর পর বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির জীবন্ত ক্যানভাসে কি তার বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে তা দেখবার সময় এখন। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর তদানিন্তন কালের অন্যতম পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরী কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে “তলাবিহীন ঝুড়ি” হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। এক ঝাঁক অর্থনীতিবিদ তখন কিসিঞ্জারের সেই পর্যবেক্ষন মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে সদ্য-স্বাধীন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের রূপরেখা প্রণয়ন করেছিলেন। যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত দেশটির শিল্পায়নের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে অন্ত:র্মুখী প্রবৃদ্ধি কৌশল (Inword-oriented growth strategy) প্রণয়ন করা হয়েছিল। সমাজতন্ত্র ও জাতীয়করণ নীতিদ্বয়ের কল্যানে শিশু শিল্পের (infant industry) বিকাশ ঘটিয়ে আভ্যন্তরীন চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণ করার অংগীকার ছিল ঐ সময় প্রবর্তিত শিশু শিল্প নীতিমালার (infant industry hypothesis) অধীনে বাস্তবায়নযোগ্য শিল্পায়ন প্রক্রিয়ায়। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর ভারত এমন রক্ষণশীল (restrictive policy) শিল্পনীতি গ্রহন করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার উপনিবেশ হতে মুক্ত হওয়ার পর পরই জাপানের শিল্পনীতিতেও অন্তর্মুখী প্রবণতা ছিল। ভারত ও জাপান পাঁচ ছয় বছর পরই শিল্পায়নের আভ্যন্তরীন লক্ষ্য সমূহ পূরন কওে বৈশ্বিক অংগীকার শক্তিশালী করতে উদ্যত হয়।
দু:খজনক হলো, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে শাসক শ্রেণীর চোখে ধূলা দিয়ে ক্ষমতা কেন্দ্রের কাছে থাকা প্রভাবশালীরা জাতীয় করনের সুদূর প্রসারী নীতিকে দুর্নীতি, আত্মীকরন ও লোপাটের সোচ্ছারে ব্যর্থতার বিয়াবানে নিক্ষিপ্ত করে। বাংলাদেশের অন্তর্মুখী শিল্পায়ন সাফল্যের ডানা প্রসারিত করে উড্ডয়নের take-off) পূর্বেই অংকুরে বিনষ্ট হয়। এরপর অন্তর্মুখী উন্নয়ন কৌশল নিয়ে আর কোন তাত্বিক বিতর্ক দেখা যায়নি, প্রায়োগিক কৌশলও নির্ণীত হয়নি। শিল্পায়নের আবশ্যকীয় ও পূর্বশর্ত মাটিচাপা দিয়ে ছিয়াত্তরের পরবর্তী সময়ে বহির্মুখী প্রবৃদ্ধি কৌশলের (outward oriented growth strategy) পথে অগ্রসর হন নীতি নির্দ্ধারকগণ। তৃতীয় বিশ্বেও টেকসই ও যুৎসই শিল্পায়ন কৌশল হলো অন্তর্মুখী উন্নয়ন ধারা হতে ধাপে ধাপে বহির্মুখী উন্নয়ন ধারায় (phased transition) ধাবিত হওয়া। কিন্তু তা না করে সেই থেকে আজ পর্যন্ত রপ্তানীমুখী শিল্পায়নের (export-led industrialization) যে মহড়া চলছে তা বাংলাদেশকে জাপান, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, চীন, কোরিয়া বা ভারতের সত উন্নয়ন উড্ডয়নে সহায়ক হয়নি। সে কারনে আমাদের শিল্পায়ন চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে, জিএসপি হারাচ্ছি, হোচট খাচ্ছি বিশ্ব বিপনন (global marketing) প্রক্রিয়ায়। ইদানিং শুনছি পোষাক শিল্পের বহির্বাজারে বাংলাদেশ ভিয়েতনামের কাছে নতুন করে মার খাচ্ছে। তাছাড়া শিল্পায়নের অন্যান্য পূর্বশর্তসমূহ যথা উন্নত অবকাঠামো, নিরাপত্তা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রভৃতি বিষয়গুলো আমরা কাংখিত পর্যায়ে রাখতে ব্যর্থ হয়েছি বলে আমাদের সম্ভাবনাময় শিল্প খাত আজনবী অন্ধকারে বিলীন হচ্ছে।
সামাজিক সুবিচার প্রশ্নে বাংলাদেশ যে এত পিছিয়ে থাকবে তা বোধ করি স্বাধীনতার আর্কিটেকটগণ কখনো ভাবেননি। বিচারে বানী আজ নিভৃতে কাঁদে। আমাদের কোর্ট কাচারিগুলো নির্লজ্জ দলীয় কারণের শিকার হয়ে আসছে সাবাধীনতার পর থেকেই। বাংলাদেশ রাষ্টের মূলনীতি চতুষ্টয়ের অন্যতম ‘গণতন্ত্র’ প্রত্যয়টি কেবল সংবিধানের কৃষ্ণ-কালিতেই শোভিত, সামাজিক জীবনাচারে তার প্রয়োগ কোথায়? গণতন্ত্রের অন্যতম চাহিদা ও নির্দেশিকা হলো ক্ষমতার পৃথকীকরণ (Separation to Power) যা এখনো পর্যন্ত এদেশে দৃশ্যমান হলো না। রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচারক নিয়োগ, বিচার বিভাগের উপর নির্বাহী বিভাগের ছায়-নিয়ন্ত্রণ (Shador domination) রাজনৈতিক হোমরা চোমরা কর্তৃক বিচারকদের হুমকি প্রদান, বিচার প্রতিষ্ঠানে অনর্থক দলাদলি আমাদের সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠায় দুর্লঙ্গ অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার উদার আদর্শবাদ (liberal idalism) প্রতিনিয়ত পরাস্ত প্রায়। সে কারণে আধুনিক মালশিয়ার স্থপতি মাহাথির মোহাম্মদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন বক্ততায় আইনের শাসন (Rule of law) বাদ দিয়ে সুবিচারের শাসন (Rule of justice) প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশর ন্যায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিচার প্রকিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। বিচার কার্যে দীর্ঘসূত্রতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, আইনের মার-প্যাচে অন্যায়, অন্যান্য বিষয়কে আইনি বৈধতা দেওয়ার প্রবণতা রুখতে না পারলে সামাজিক সুবিচারের স্বপ্ন আমাদের হারিয়ে যাবে। পারস্পরিক সম্মান, সামাজিক সহিষ্ণুতা, সাংস্কৃতিক বিকাশের সুস্থ্যধারা বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে সামাজিক নিষ্ঠুরতা নৃশংস সামাজিক ব্যধিতে সংক্রমিত হয়ে সামাজিক সুচিবারের মূলোৎপাটন আবহমান কালের সামাজিক সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি সুদৃড়ভাবে ধারন করতে না পারলে সামাজিক সুবিচারের শেষ আশাটুকুও নি:শেস হয়ে যাবে।
সাংস্কৃতিক পরিস্ফুরনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন নগ্ন বিশ্বায়নের উন্মত্ততায় স্বীয় সংস্কৃতি বিস্মৃত হচ্ছে। দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে সাংস্কৃতিক ক্যাম্পাসের চিরায়ত চিত্র, আর তার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে পাশ্চাত্য, অপাশ্চাত্যের পঁচা, দুর্গন্ধময় অপসংস্কৃতি। আগেকার দিনে সংস্কৃতি বলতে সংগীত, নৃত্য, সাহিত্য জীবনাচার, ধর্ম ইত্যাদি বিষয়গুলোকে বুঝানো হতো। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় একবিংশ শতাব্দীতে ফেসবুক, টুইটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য বিষয়গুলোও সাংস্কৃতিক বিস্তৃত ক্ষেত্রে পরিগণিত হচ্ছে। আকাশ সংস্কৃতির বিস্তার এখন বাংলাদেশের সীমানা ডিংগিয়ে অত্রাঞ্চলের সংস্কৃতিতে প্রবিষ্ট হয়েছে মহীরুহ হিসেবে। আমাদের দেশের সহজাত সংস্কৃতির সেই পেলব-পরশ এখন অনেক বেশী দূষিত হচ্ছে বহুবিধ ও বহুমুখী অতিথি সংস্কৃতির অযাচিত সংমিশ্রনে। কিছুদিন আগে নন্দিত কথাসাহিত্যিক গল্পকার বিজ্ঞানী অধ্যাপক জাফর ইকবাল তাঁর “ইন্টারনেটের কানাগুলি” শীর্ষক লেখায় ইন্টারনেট সংস্কৃতি কিভাবে আমাদের কিশোর তরুনদেরকে পথভ্রষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন। গত ২৯ ডিসেম্বর জিপি-ডেইলি ষ্টার-প্রথম আলোর গোলটেবিল আলোচনায় শিশু-কিশোরদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য সচেতনতা সৃষ্টির উপর গুরুত্ব দিয়ে সাংস্কৃতিক ধ্বসের কবল থেকে উদ্ধারকার্য চালানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আমাদের টিভিতে বিদেশী সিরিয়ালগুলে বাঙালীর পরিবার প্রথা, পরিবার সংস্কৃতি, পরিবারের সুখ-শান্তিগুলোকে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলছে। একুশের বইমেলায় গল্প উপন্যাসের ছত্রছায়ায় অসংখ্য বিকৃত, বাঙালী সংস্কৃতি-বিরোধী অপ-সংস্কৃতি এমনভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে, যা আমাদের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ভীতির কথা মনে করিয়ে দেয়। নাটক, সিনেমার ক্ষেত্রেও একই কথা, এর কাহিনী সংলাপ, চাহনি, চরিত্র সবকিছু যেন আমাদের কথা বলে না, কেবল অন্যদের বিকৃত পথে যেতে আমাদেরকে প্ররোচিত করে। এতসব সাংস্কৃতিক অবক্ষয় নিয়ে গত চুয়াল্লিশ বছরেও আমরা কোন স্মাট চিন্তা করতে পরিনি। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে না আছে কোন বিধি নিষেধ, না আছে কোন রূপরেখা, না আছে কোন খেয়াল।
রাজনৈতিক অধিকারের প্রশ্নে আমরা আজ বিশ্বের জন্য একটি বড় বিষ্ময়, বড় উদ্ধেগের কারন হয়ে দাড়িয়েছি। আমাদের রাজনীতি কেমন হবে, রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্যারাডাইজ কি হবে, রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব ও কর্তব্য কি হবে। সে সকল বিষয়ে আমরা বহি: উপদেশের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। চুয়াল্লিশ বছরে পনের ষোলবার সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে, রাষ্ট্রের চারটি মূলনীতির তিনটিই এ সংশোধনের ছুরিকাঘাতে জর্জরিত হলেও “গণতন্ত্র” মূলনীতিটি অটুট রয়েছে। অর্থাৎ আমরা গণতন্ত্রকে রাজনৈতিক অধিকারের রক্ষাকবচ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতিদানের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, গণতন্ত্রই আমাদের শেষ কথা। কিন্তু সেই গণতন্ত্রের মডেল কি হবে, তা কি ওয়েস্টমিনিষ্টার নাকি কনসেনসাস এবব মৌলিক প্রশ্ন এখনো অমিমাংসিত রয়ে গেছে। নির্বাচন, নির্বাচনী রূপরেখা, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে রক্তের বন্যা বয়ে গেছে, কিন্তু এখনো উপসংহারে পৌঁছেনি।
সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দাবীতে একসময় কেয়ার টেকার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল তুমুল আন্দোলনের মাঝ দিয়ে। কিন্তু পুনরায় সেই ব্যবস্থা রহিত করা হয় তাঁদের দ্বারা, যাঁরা এ ব্যবস্থার জন্য দুর্বার সংগ্রাম করেছিলেন। মজার ব্যাপার হলো, যাঁরা প্রথমে এ ব্যবস্থা বুঝতে চান নি, মানতে চান নি, তাঁরাই গত কয়েক বছর ধরে সেই ব্যবস্থার পুন:প্রবর্তনের জন্য দাবী জোরদার করছেন। এই স্ববিরোধিতার মুখে আমাদের গণতন্ত্র আর্তনাদ করেছে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সুদূর পরাহত হয়েছে, দেশ আমাদের অনূশ্চ বৈশ্বিক ইমেজের ভোগান্তিতে পতিত হয়েছে। ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ শ্লোগান পৃষ্ঠে অংকিত করে স্বৈরতন্ত্রের বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন শহীদ নূর হোসেন তবুও আমদের গণতন্ত্রের কাংখিত গন্তব্য ক্রমে সরে যাচ্ছে যোজন যোজন দূরে। গঠনমূলক সংলাপ-সহযোগিতার মাঝ দিয়ে বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার সিঁড়ি বেয়ে গণতন্ত্রের বিকাশ লাভের যে সম্ভাবনা তৈরী হয়েছিল, তাও আজ ভূলূন্ঠিত প্রায়।
সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন মিয়ানমারের মজলুম জননেত্রী গণতন্ত্র কন্যা সূচি নিরংকুশ বিজয় পেলেও দীর্ঘ পঁচিশ বছর যে সামরিক জান্তা তাঁর কৈশোর যৌবনের সুন্দর সময়গুলো কেড়ে নিয়েছেন, সেই জান্তার সাথে তিনি সংলাপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বৃটিশ ও জাপানি উপনিবেশ হতে মিয়ানমারের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনে তাঁর পিতা অং সান অবিসংবাদিত জননেতায় পরিণত হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে অধিকাংশ মন্ত্রীসভার সদস্যসহ যাঁরা গোপনে হত্যা করেছিলেন, তাঁদের সাথেও সূচি গণতান্ত্রিক সংলাপে বসবেন বরে অনুসিত হয়। অর্থ্যাৎ যে সংলাপে গণতন্ত্রের সম্ভাবনা লুকায়িত থাকে তাকে জীবন দিতে চেয়েছেন সূচি। দুভার্গ্যবশত: শত চেষ্টায়ও এদেশে রাজনৈতিক সমঝোতার একটি পথও তৈরী করা যায়নি। গণতন্ত্র একটি বিশাল বৃক্ষ। যা কঠিন পর্বতের বুক চিরে অংকুয়িত হয়। পর্বতের প্রস্তর খন্ড বিদীর্ন করে তার মূল গভীরে প্রোথিত হয়। আয় শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে চর্তুদিকে বিস্তৃত হয়। এক সময় সেই বৃক্ষ ফলের ডালি সাজায়, ফুলের গন্ধ ছড়ায়। কিন্তু এদেশে এমন সুদৃঢ় গণতন্ত্র বৃক্ষের প্রত্যাশা অলীক নয়।
এতসব হতাশার মাঝেও একগুচ্ছ সাফল্য ও রয়েছে আমাদের। সাম্প্রতিক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ তার প্রবৃদ্ধি ধারা অক্ষুন্ন রাখতে অক্ষম হয়েছে, শিক্ষা, বিজ্ঞানে, প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত (Rule Model) স্থাপন করেছে। যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু করে এই বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে যে, এদেশে কেউ-ই বিচারের উর্ধ্বে নয় এবং বিচার বিভাগের দৃঢ়তা প্রতিপন্ন হয়েছে। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার ছড়াছড়ি রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সংলাপের অপরিহার্যতার প্রেক্ষিত রচনা করছে। আমি আশাবাদী, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর থাকি সবসময়। আমাদেও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অন্তঃ এবং আন্তঃ দলীয় কোন্দলের উর্ধ্বে উঠে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মানে নির্মোহ ভুমিকায় অবতীর্ন হলেই কোন কাঙ্খিত গণতন্ত্রের ফল ভোগ সম্ভব হবে।
আমি সময় মাপতে পারবো না, তবে আমি নিশ্চিত গণতন্ত্র আমাদের আসবেই আজ অথবা কদিন পর। বিশ্বের সকল গণতন্ত্র পাঠে রাজনৈতিক দল গুলো এতদিনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, নব-প্রজন্মের নেতৃবৃন্দ গনতান্ত্রিক মূল্যবোধের সৃজশীলতা অনুশীলন করছেন, গন মানুষ কোটি হ্দয়ের গণতন্ত্র অর্জনের গন আকাঙ্খা সঞ্চায়িত হচ্ছে প্রতিনিয়ত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের চুয়াল্লিশতম বিজয় দিবসের সু-প্রভাত এ গণ-প্রত্যাশা বাস্তবায়িত হবে এ আমাদের সকলের চাওয়া।
প্রফেসর মুহাম্মদ রুহুল আমিন
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়